ভাষা ও সংস্কৃতি

 ভাষা:

কয়লার দিয়াড় গ্রামের মানুষ বাঙালি হিসেবে তাদের স্বভাভসুলভভাবে বাংলা ভাষাতেই কথা বলে। বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষা এখানকার মানুষ ব্যবহার করেনা।
 

সাংস্কৃতিক:
কয়লার দিয়াড়ের সাংস্কৃতিক জীবন-ধারা সম্পর্কে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আনন্দ, উল্লাস এবং উৎসবের মাধ্যমে এ ধারা অগ্রসর হয়েছে। অতীত ঐতিহ্য, মানবীয় কৃতিত্ব বা জাতীয় সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক চেতনার প্রসারণের বিশেষ কোন প্রচেষ্টা হয়নি। তবে সাংস্কৃতিক ভাবধারা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় এখানকার সাংস্কৃতিক জীবন ও সৃজনী শক্তি ধীরে ধীরে উৎসাহিত হয়েছে।

এখানকার সংস্কৃতি ভাবাপন্ন মানুষ গম্ভিরা, আলকাপ, যাত্রা ইত্যাদির সাথে জড়িত।

আলকাপ গান:

নবাবগঞ্জ জেলায় প্রচলিত এক শ্রেণীর গানের নাম ‘আলকাপ’। এর অর্থ হলো হাস্য কৌতুক। গম্ভীরা যাত্রা থিয়েটার প্রভৃতির মতো আলকাপও পল্লী সংস্কৃতির বাহক। পল্লীর পথে ঘাটে মাঠে প্রান্তরে নদী-নালায়, রাখাল বালক, কৃষক, মাঝি এ গানের সংরক্ষক। কেননা এ গান রচয়িতারা কেউ অশিক্ষিত, কেউবা সামান্য শিক্ষিত। আসরে গান গাওয়ার পর আর কোন খোজ রাখে না, সুতরাং পল্লীর রাখাল, কৃষক মজুর ও নৌকার মাঝি এ গান শোনার পর ইচ্ছে মতো গেয়ে থাকে। অন্যান্য গানের মত আলকাপও লোক সংগীতের প্রধান অঙ্গ। নবাবগঞ্জ অঞ্চলের লোক সঙ্গীতের ইতিহাসে এটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। এর রচয়িতাদের সরকার বলা হয়ে থাকে। এ গান কখন কিরূপে বর্তমান রূপ লাভ করেছে  তা জানা যায় নি।

আলকাপ গানের উৎপত্তি সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। গম্ভীরা গানের জন্মদাতা আলকাপ গান, একথা এম, আমজাদ আলীর সাহেবের ‘আলকাপ গান’ প্রবন্ধে (আজাদ সাহিত্য মজলিশ ৯ই মে ১৯৬৪ সংস্করণ) উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গম্ভীরা, সত্য পীরের গান ও মনসার ভাজন হতে আলকাপ গানের সৃষ্টি এবং এটি শিবগঞ্জ উপজেলার নিজস্ব সম্পদ। প্রায় শতবর্ষ পূর্বে বোনাকানা নামক জনৈক ব্যক্তি এ গানের বর্তমান রূপ দান করেন। বোনা কানা গম্ভীরা গানও রচনা করতেন। আলকাপ গানের আসরে কয়েকজন লোক এবং এক বা একাধিক ‘‘ছোকরা’’ থাকে। ছোকরারা স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করে থাকে। গান আরম্ভের সময় বন্দনা গাওয়া হয়। বন্দনা গম্ভীরা জাতীয় গান। এতে দেশে নানা সুবিধা অসুবিধা, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আলোচনা থাকে। গল্পাকারে আলকাপ গান গাওয়া হয়। পূর্বে হিন্দু শাস্ত্রের আলোচনা ছিল এ গানের একমাত্র বিষয়বন্তু পরবর্তীতে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আলোচনাও এ গানে স্থান পায়। শিবগঞ্জের মানিক সরকার ও তেলকুপির গোবিন্দ চন্দ্র আলকাপ গান রচনায় খ্যাতি লাভ করেন। গানের শিল্পীরা দলবদ্ধভাবে আসন নিয়ে বসে। একদলের গান শেষ হলে অন্য দল আরম্ভ করে, নৃত্য বাদ্য ঝংকারের মাধ্যমে গানের শেষ হয়। ছোকরারা নৃত্যকলা প্রদর্শন করে। তবলা, হারমোনিয়াম, জুরি প্রভৃতি বাদ্য যন্ত্র থাকে, আসরে একবার কোন পক্ষের সরকার প্রতিপক্ষের সরকারকে প্রশ্ন করে। প্রতিপক্ষের সরকার তার প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং তাকে আর এক প্রশ্ন করে। এই প্রশ্ন উত্তরে কে কত কৌতুক ও হাসির হিল্লোল তুলতে পারে দর্শকরা তাই উপভোগ করে। লোক সঙ্গীতের এক অনন্য সম্পদ আলকাপ সংগ্রহের উদ্যোগ দেশীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।